সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ৮ দফা দাবী আদায়ের লক্ষে দেশব্যাপী সমাবেশের ধারাবাহিকতায় রংপুরে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে এ বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ মাঠে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে সনাতনীরা মিছিল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে আগত সনাতনীরা মাঠসহ আশে পাশের সড়ক অবস্থান নেন।সমাবেশে প্রধান বক্তা বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বক্তব্যে বলেন, ৫ আগস্টের পর অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে, আন্দোলনের কারনে পরিক্ষা ছাড়াই পাশ মেলছে, আন্দোলনে অনেক বিষয়ে স্বীকৃতি মিললেও তিন মাস হয়ে গেলো আমাদের বিষয়ে কোন সমাধান হয়নি। বরং এখনও হিন্দুদের বাড়িঘর লুট করা হচ্ছে, হিন্দুদের চাকুরী যাচ্ছে। যা কষ্টদায়ক। তাই বলতে চাই, সনাতনীদের এ দেশ থেকে উৎখাতের চেষ্টা হলে পরিণতি ভালো হবে না। সনাতনী ধর্মের সকল সংগঠন আজ ঐক্যবদ্ধ, তাই দেখে অনেকে ঈর্ষাণিত হয়ে সমাবেশে আসতে বাধা প্রদান করছেন। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, সাধুরা সমবেত হয়েছেন সনাতনীদের দাবি আদায়ে। সনাতনীদের ওপর যতোই নিপীড়ন হবে, আমরা ততো বেশি ঐক্যবদ্ধ হব।চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী সকল সনাতনীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা যদি এসব প্রশ্রয় দেই, প্রশ্রয় দিলে এই বাংলাদেশ ইরাক হবে, লিবিয়া, সিরিয়ার মতো হবে। তাহলে কোন সরকার স্থায়ী ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। বিদেশী শক্তি এখনই থাবা দেয়ার প্রচেষ্টা করছে। তাই বলতে চাই, আমার মা আমাদের কাছে যেমন, এই মাতৃভুমিও আমার মায়ের মতো। আমরা এখানে জন্মেছি, এখানেই থাকবো। কোথায় যাবো না।তিনি আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এ দেশে কেউ সংখ্যালঘু না, সবাই বাংলাদেশী। সেই কথার প্রেক্ষিতে বলতে চাই, সনাতনীরা কোন নির্দিষ্ট দলের কিংবা রাজনৈতিক দলের সমর্থন করে না। আমাদের ন্যায় অধিকার যারা নিশ্চিত করবে আমরা তাদেরই ভোট দিবো। আমরা রাষ্ট্রবিনির্মানে সহযোগিতা করতে চাই। আমরা উপদেষ্টা হতে চাই না। আমরা ক্ষমতা চাই না। রাষ্ট্রবিনির্মাণে সহযোগি হতে চাই।সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সনাতনী বিদ্যার্থী সংসদের প্রতিষ্ঠাতা বরণ কুশল চক্রবর্তী, চট্টগ্রামের গিরি আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী ওমেশানন্দ গিরি মহারাজ, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের স্বামী বিপ্রানন্দ জী ও শ্রী শ্রী গোপীনাথ ব্রহ্মচারীসহ বিভাগীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ থেকে ৮ দফা দাবি জানানো হয়। দাবি দাবিগুলো হলো-
১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন।
২. অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন।
৩. সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন।
৪. হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ‘হিন্দু ফাউন্ডেশনে’ উন্নীত করাসহ বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে রূপান্তর।
৫. ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন’র যথাযথ বাস্তবায়ন।
৬. সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ ও প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করা।
৭. ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষাবোর্ড’ আধুনিকায়ন।
৮. দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটিসহ প্রতিটি সপ্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে প্রয়োজনীয় ছুটির ব্যবস্থা করা।এর আগে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের ব্যানারে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে সমাবেশ করার কথা ছিলো। জেলা প্রশাসন অনুমতি দিলেও বৃহস্পতিবার রাতে সমাবেশের ভেন্যু পরিবর্তন করা হয়। সেই পরিবর্তিত হিসেবে মাহিগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ২ সমাবেশ শুরু কথা থাকলেও বিকেল ৩ টায় সমাবেশ শুরু হয় এবং সন্ধ্যার আগেই শেষ হয়।