দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাটে মমতাজ ক্লিনিক এন্ড কনসালটেন্ট সেন্টারে নার্সের ভুল চিকিৎসায় এক নবজাতক শিশু জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী নবজাতকের পরিবারের সদস্যরা।
এই নবজাতক উপজেলার আংগারপাড়া ইউনিয়নের ছাতিয়ানগড় গ্রামের বাবুল মেম্বার পাড়ার বাসিন্দা অমল সরকার ও শিউলি সরকার দম্পতির প্রথম সন্তান। বর্তমানে ৪ দিনের এই ছেলে সন্তান রংপুরের প্রাইম মেডিকেলে আইসিইউ বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নবজাতকের চাচা দীপক বিশ্বাস মুঠোফোনে অভিযোগ করে জানান, পাকেরহাট মমতাজ ক্লিনিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টারে গত বুধবার সন্ধ্যায় সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সুস্থ-সবল অবস্থায় এই ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। পরবর্তী সময়ে ঐ ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে প্রসূতি মা শিউলি সরকারের ইনজেকশন কর্তব্যরত নার্স নবজাতকের শরীরে ইনজেকশন পুশ করে। এরপর শুক্রবার ভোরবেলা অসুস্থ হয়ে পড়লে মমতাজ ক্লিনিক এন্ড কনসালটেন্ট সেন্টারের দায়িত্বরত ম্যানেজারসহ নবজাতককে নীলফামারী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরবর্তী সময়ে অবস্থার অবনতি হলে রবিবার সকালে রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে আইসিইউ বিভাগে ঐ নবজাতক চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাবার রক্তের গ্রুপ যদি পজেটিভ ও মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ হয় সেক্ষেত্রে নেগেটিভ মায়ের যদি পজেটিভ বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে তাহলে বাচ্চা জন্মের ৭২ ঘন্টার মধ্যে ঐ প্রসূতি মায়ের শরীরে এন্টি-ডি ইনজেকশন প্রদান করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নবজাতকের বাবা অমল সরকার বলেন, নার্সের ভুলে আমার সন্তান এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছে। ঐ ক্লিনিকের নার্স আমাদের স্লিপ ধরিয়ে দিলে এন্টি-ডি ইনজেকশন নীলফামারী থেকে নিয়ে আসি। পরে ভালোভাবে না জেনেই নার্স নবজাতকের শরীরে সেই ইনজেকশন পুশ করলে সে অসুস্থ হয়। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
মমতাজ (প্রাঃ) ক্লিনিক ও কনসালটেন্ট সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মোছাব্বের হোসেন সবুজের সাথে হলে তিনি জানান, ঐ বাচ্চার শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে ডেকাসন নামে রোগ প্রতিষেধক একটি ইনজেকশন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে অবস্থার অবনতি হলে নীলফামারী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের পর আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে ইনজেকশন পুশে নার্সের ভুল হতে পারে। এ নবজাতকের দেখভাল করার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শামসুদ্দোহা মুকুল জানান, বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। ভুক্তভোগী পরিবার যদি অভিযোগ দেয় অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মিত তদারকি অব্যাহত রয়েছে। এবিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: তাজ উদ্দিন জানান, এমন ঘটনা মোটেও কাম্য নয়। এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।